বিটকয়েন সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানা দরকার। সাথে কিছু মজার তথ্য!

ইন্টারনেটের যুগে বিটকয়েন হলো সবচেয়ে অভাবনীয় উদ্ভাবনগুলোর মধ্যে একটি। ভবিষ্যত ফাইন্যান্সিয়াল জগতে বিটকয়েন একটা বড় রোল প্লে করবে বলাই যায়। একারণে বিটকয়েনকে বলা হয় ফিউচার অফ মানি। আপনি যদি একজন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও হয়ে থাকেন তাহলে আমি আশা করি আপনি বিটকয়েনের নাম শুনেছেন। তবে অনেকেই ধারণা করে থাকেন বিটকয়েন ইউজ করা হয় ডার্ক ওয়েবে ক্রাইম করার জন্য।

আজকে আমি আপনাদেরকে বিটকয়েন সম্পর্কে একটা ক্লিয়ার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। বিটকয়েন কোত্থেকে এসেছে, বিটকয়েন কি কাজে ব্যবহার করা হয়, এবং বিটকয়েন নিয়ে কিছু ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টস নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করবো।

বিটকয়েনের উদ্ভব

২০০৮ সালের দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা মন্দা চলছিলো। বড় বড় ব্যাংকগুলো যখন দেওলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষের মনে ব্যাংকগুলোর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই সাতোশি নাকামতো নামের এক অজানা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটা হোয়াইট পেপার রিলিজ করে বিটকয়েনের উদ্ভব ঘটায়। বিটকয়েন হলো এমন এক ট্রানজেকশন সিস্টেম যার দ্বারা কোন থার্ড পার্টি মাধ্যম(যেমন: সরকার বা ব্যাংক) ছাড়াই টাকা লেনদেন করা যায়। এই ধারণাটিকে বলা হয় ডিসেন্ট্রালাইজেশন। আর এই টেকনোলজির নাম হলো ব্লকচেইন টেকনোলজি। হোয়াইট পেপার রিলিজ করার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বিটকয়েন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। 

বিটকয়েনের কোর ফিচার ফিচারগুলো হচ্ছে :

ডিজিটাল মানি: বিটকয়েন হচ্ছে টাকার মতো। কিন্তু এটা শুধুমাত্র ইন্টারনেটেই এক্সিস্ট করে। আপনি বিটকয়েন কে সাধারণ টাকার মতো হাত দিয়ে ধরতে পারবেন না। মানে বিটকয়েনের কোন ফিজিক্যাল রূপ নেই।

ডিসেন্ট্রালাইজড: সাধারণ টাকার সব কন্ট্রোল কিন্তু সরকার বা ব্যাংকের হাতে। কিন্তু বিটকয়েনকে কেউ কন্ট্রোল করতে পারে না। আপনার একাউন্টে যত বিটকয়েন রয়েছে তা আপনি ছাড়া আর অন্য কেউ ম্যানেজ করতে পারবে না। বিটকয়েনে সব লেনদেনের হিসাব নিকাশ ব্লকচেইনে স্টোর করা থাকে। ব্লকচেইন হচ্ছে সারাবিশ্বের লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক। যার ফলে কারও পক্ষে বিটকয়েনকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হয় না।

নিরাপদ লেনদেন: আপনি যখন কাউকে বিটকয়েন পাঠাবেন তখন সেটি অনেকগুলো ব্লকের ভিতর দিয়ে ট্রান্সফার হয়। যার ফলে কারও পক্ষে প্রতারণা বা হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব।

লিমিটেড সাপ্লাই: সাধারণ টাকার কিন্তু কোন লিমিটেশন নেই। সরকার বা ব্যাংক চাইলেই আনলিমিটেড টাকা ছাপাতে পারবে। কিন্তু বিটকয়েনের সংখ্যা লিমিটেড (২১ মিলিয়ন)। এর চেয়ে বেশি বিটকয়েন মার্কেটে কেউ ছাড়তে পারবে না। এই সাপ্লাই ডিমান্ড এর কারণে বিটকয়েনকে ডিজিটাল গোল্ড হিসেবে ধারণা করা হয়। 

কেনাবেচা: আপনি চাইলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ থেকে বিটকয়েন কিনতে পারবেন। আবার বিটকয়েনের বিনিময়ে আপনি অনলাইন থেকে জিনিপত্রও কিনতে পারবেন। বর্তমানে অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান বিটকয়েনে পেমেন্ট নেওয়া শুরু করছে। যার ফলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বিটকয়েনের একটা ভালো ইউজকেস তৈরি হচ্ছে।

 

এবার চলুন বিটকয়েন নিয়ে কিছু মজার তথ্য জানা যাক। 

মিলিয়ন ডলারের পিজ্জা

২০১০ সালের মে মাসে Laszlo Hanyecz নামের এক ব্যক্তি একটা হিস্টোরি তৈরি করে। তখন বিটকয়েনের দাম ছিল অনেক কম। সে মাত্র দুইটি পিজ্জা কিনে ১০ হাজার বিটকয়েন দিয়ে। এই ব্লগটি লেখার সময় একটা বিটকয়েনের দাম প্রায় 27 লাখ টাকার আশেপাশে, এবং বিটকয়েনের অল-টাইম হাই প্রাইস ছিল ৭০ লাখ টাকার মতো। তাহলে চিন্তা করুন 2010 সালের ওই দুইটি পিজ্জার দাম এখন বর্তমানে কত হবে। আরো একটি মজার তথ্য হচ্ছে, ওটাই ছিল বিটকয়েন দিয়ে প্রথম কোন জিনিস কেনা। যে কারণে মে মাসের ২২ তারিখকে "Bitcoin Pizza Day"  দিবস হিসেবে ধরা হয়। 

বিটকয়েনের রহস্যময় আবিষ্কারক

বিটকয়েন আবিষ্কার হয়েছে প্রায় অনেকগুলো বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ জানে না বিটকয়েন কে তৈরি করেছে। বিটকয়েনের আবিষ্কারক হিসেবে মানুষ যে নামটি জানে তা হল "সাতোশি নাকামতো"। কিন্তু কে এই সাতোশি নাকামতো? কেউ জানে না তার আসল পরিচয়। গোটা ইন্টারনেট দুনিয়ায় এটা একটা বড় রহস্য।

শেষকথা,

বিটকয়েন ধীরে ধীরে সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো বিটকয়েন এর সাথে ইনভলবড হচ্ছে। ধারণা করা হয় ভবিষ্যতে প্রায় প্রতিটা মানুষের কাছেই একটা ক্রিপ্টো ওয়ালেট থাকবে, যেখানে বিটকয়েনের মত ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো স্টক থাকবে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.