সাতোশি নাকামতো নামটি হয়তো আপনি শুনে থাকবেন। না শুনলেও বিটকয়েনের নাম তো অবশ্যই শুনেছেন। বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি (ব্লকচেইন টেকনোলজি) হলো ডিজিটাল দুনিয়ার একটা রিভোলোশনারি উদ্ভাবন। বিটকয়েন কে বলা হয় ফিউচার অফ মানি। এর কারণ হলো বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করা সম্পূর্ণ ডিসেন্ট্রালাইজড। ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিসেন্ট্রালাইজেশন নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করবো।
আজকে আলোচনা করব সাতোশি নাকামতো কে নিয়ে। তিনি হলেন "বিটকয়েন" এর আবিষ্কারক। এখানে "তিনি" বললে ভুল হবে। কারণ সাতোশি নাকামতো আসলে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি নাকি কোন গ্রুপ তা এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। বিটকয়েনের মতো এমন একটা গুরুত্বপূর্ন উদ্ভাবনের পেছনে যার অবদান রয়েছে, সে কেনো তার পরিচয় লুকিয়ে রাখবে সেটাই বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ার একটা বড় মিস্ট্রি।
বিটকয়েনের জন্ম
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে "সাতোশি নাকামতো" ছদ্মনাম ব্যবহার করে একটি হোয়াইট পেপার বা নথিপত্র প্রকাশ করা হয়। নথিপত্রটির শিরোনাম ছিলো, "Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System". এর মাধ্যমেই বিটকয়েনের সাথে পরিচিত হয় সারা বিশ্ব। নথিপত্রটিতে বুঝানো হয়, বিটকয়েন হলো এমন একটা ট্রানজেকশন সিস্টেম যার মাধ্যমে কোন তৃতিয়পক্ষ (যেমন: ব্যাংক বা সরকার) এর হস্তক্ষেপ ছাড়াই অর্থ বা টাকা লেনদেন করা যাবে।
এইযে, কোন তৃতীয়পক্ষ ছাড়াই ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি তে লেনদেন করতে পারার যে ব্যাপারটা তাকে বলা হয় ডিসেন্ট্রালাইজেশন। নথিপত্রটি প্রকাশ পাওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বিটকয়েন জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
এইদিকে "সাতোশি নাকামতো" বিটকয়েনের প্রচারণার জন্য কাজ করতে থাকে। পরিচয় গোপন রেখে অনলাইন ফোরাম এবং ইমেইলের মাধ্যমে সে তার কমিউনিটি মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ করতো। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন মাইনিং এর মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন মার্কেটে ছাড়া হয়। প্রথম দিকে শুধুমাত্র সাতোশি নাকামতো নিজেই মাইনিং করতো। তারপর তার কমিউনিটি মেম্বাররাও মাইনিং করতে শুরু করে। আস্তে আস্তে বিটকয়েনের দাম বাড়তে থাকলে, মানুষ হুমড়ি খেয়ে মাইনিং করতে শুরু করে।
সাতোশি নাকামতোর খোঁজ
বিটকয়েন আবিষ্কারের অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেলেও এর আবিষ্কারক বা সাতোশি নাকামতোর পরিচয় কেউ জানতে পারেনি। বিটকয়েনের দাম যখন আকাশছোঁয়া হতে শুরু করে, এবং সারাবিশ্বেই যখন এর জনপ্রিয়তা হুঁ হুঁ করতে বাড়তে থাকে তখন বিভিন্ন মানুষ বা প্রতিষ্ঠান নিজেদেরকে সাতোশি নাকামতো বলে দাবি করতে থাকে। ইতিমধ্যেই অনেক প্রোগ্রামার, বিজ্ঞানী এবং বিলিয়নিয়াররা নিজেদেরকে সাতোশি নাকামতো বলে দাবি করেছেন। কিন্তু কেউই যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি বলে, সাতোশি নাকামতো আজও অ্যানোনিমাস রয়ে গেছেন।
কেন সাতোশি নাকামতো তার পরিচয় লুকিয়ে রেখেছে?
এই প্রশ্নের উত্তর আসলে কারও কাছে নেই। যেহেতু সাতোশি নাকামতো কে সেটা কেউ জানে না, সেহেতু কেন সে তার পরিচয় লুকিয়ে রেখেছে সেটাও কেউ জানে না। বিটকয়েনের মতো এমন একটা টেকনোলজি আবিষ্কার করতে পারলে যে কেউ চাইবে নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে। তবে, সাতোশি নাকামতো কি কারণে অ্যানোনিমাস রয়ে গেছেন সেটা একমাত্র সেই জানে।
তবে এমনও হতে পারে, সাতোশি একটা নির্দিষ্ট সময় অ্যানোনিমাস থেকে পরবর্তীতে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতেন। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা গেছেন। আবার এও হতে পারে, বিটকয়েনের টেকনোলজিটা যেহেতু ডিসেন্ট্রালাইজড মানে এতে কারও কোন হস্তক্ষেপ নাই, সেহেতু সাতোশি নাকামতো বিটকয়েনকেও এমনভাবে পরিচয় করিয়েছেন যে এটার কোন সঠিক সত্য ইনভেন্টর নেই, বা বিটকয়েনকে কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে না।
যাইহোক,
সাতোশি নাকামতো ছিলেন একজন দক্ষ প্রোগ্রামার এবং গভীর চিন্তাশক্তির অধিকারী। যদিও তার পরিচয় রয়ে গেছে অন্ধকারে, তবুও তার আবিষ্কার বিটকয়েন কিন্তু ঠিকই আলো জ্বেলে দিবে ডিজিটাল পৃথিবীর বুকে। বিটকয়েনের মেকানিজম বা ব্লকচেইন টেকনোলজি ভবিষ্যত পৃথিবীকে রোল করবে। এবং সাতোশি নাকামতো একজন সত্যিকারের লিজেন্ড হিসেবে বেঁচে থাকবে।
You must be logged in to post a comment.